Saturday, August 19, 2017

তায়াম্মুমের পূর্ণাঙ্গ নিয়ম

SHARE

ওজুর বিপরীত বিধান তায়াম্মুম। শরীর পবিত্র কিংবা ওজুর জন্য হাতের নাগালে পানি না পেলে তায়াম্মুম করার কথা বলা হয়েছে। তায়াম্মুম সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাজে দ-ায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাকনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ বাথরুমে থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নেয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

তায়াম্মুম কি?

তায়াম্মুম অর্থ ইচ্ছা করা। শরীয়তের পরিভাষায়, পবিত্র মাটি দ্বারা পাক ও পবিত্র হওয়ার নিয়তে মুখম-ল ও উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা। তায়াম্মুমের অনুমতি উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য মহান আল্লাহর এক বিশেষ করুণা। পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে পানি। পানি না পাওয়া গেলে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তায়াম্মুম। তবুও যেন কোন মুমিন নামাজ কাযা না করে তায়াম্মুমের বিধান সেদিকেই ইঙ্গিত করে। সেই সঙ্গে নামাজের গুরুত্বও অনুধাবন হয়।

তায়াম্মুম করার শর্তাবলী

অযু বা গোসলের পরির্বতে নিন্মোক্ত অবস্থায় তায়াম্মুম করতে হয়।
আশেপাশে ১.৭ কিলোমিটারের মধ্যে পানি পাওয়া না গেলে।
পানি পেতে যদি শত্রুর, সাপ কিংবা বিপদজনক পশুর আক্রমণের ভয় না থাকে।
এত অল্প পানি থাকে যে তা গোসল বা অযুতে ব্যবহার করলে খাওয়ার পানির সংকট হবে।
কেউ তার সুচিন্তিত অভিজ্ঞতা অথবা বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে জানতে পারে যে, পানি ব্যবহার তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
পানি কিনে ব্যবহার করার মত যথেষ্ট অর্থ না থাকে।
পানির দাম খুব বেশি হয়।

তায়াম্মুমের ফরজ ৩ টি

১। পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা,
২। উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে তা দিয়ে সমস্ত মুখম-ল মাসেহ করা এবং
৩। উভয় হাত মাটিতে মেরে তা দিয়ে উভয় কনুই মাসেহ করা।

তায়াম্মুমের সুন্নাত ৭টি

তায়াম্মুমের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ বলা’, উভয় হাত পবিত্র পাটিতে মেরে সামনের দিকে নেয়া, তারপর পেছনের দিকে নিয়ে আসা, হাত মাটিতে মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা, মাটিতে হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে রাখা, মাসেহের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা, বিরতি না দিয়ে তায়াম্মুম করা অর্থাৎ উভয় মাসেহে বিলম্ব না করা।

তায়াম্মুমের মুস্তাহাব

যে ব্যক্তির প্রবল ধারণা যে, শেষ সময় পর্যন্ত পানি পাওয়া যাবে, এমন ব্যক্তির জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। আর যদি পানি পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তায়াম্মুম করে মুস্তাহাব ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা।
তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ
যে সব কারণে ওজু নষ্ট হয় সেসব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়। যে সব কারণে গোসল ওয়াজিব হয়, সে সব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। যদি পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে, তাহলে পানি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কোন ওজর বা রোগের কারণে যদি তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে, তবে সে ওজর বা রোগ দূর হয়ে গেলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে থাকে।

তায়াম্মুমের নিয়ম

তায়াম্মুমের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম শুরু করতে হয়। তায়াম্মুম করার জন্য হাতে মাটি লাগিয়ে নিতে হয়। আঙ্গুল ছড়িয়ে দুই হাত এমনভাবে পবিত্র মাটির ওপর রাখতে হয় যাতে স্বাভাবিকভাবেই হাতের তালুতে কিছু ধুলা লেগে যায়। তারপর হাতটা একটু ঝেড়ে নিতে হবে। অতঃপর উভয় হাত দিয়ে সমস্ত মুখম-ল মাসেহ করতে হয়। তারপর আবার মাটিতে হাত রেখে ধূলা লাগিয়ে নিয়ে প্রথমে বাম তালু দিয়ে ডান হাতের কনুই পর্যন্ত এবং পরে ডান তালু দিয়ে বাম হাতের কনুই পর্যন্ত মাসেহ করতে হয়।
SHARE

0 comments: