‘জান্নাত’ চির সুখের একটি যায়গা। হাদীসের মধ্যে পাওয়া যায়, সর্বনিম্ন জান্নাতের পরিধি হবে ১০টি পৃথিবীর সমান। জান্নাতের একটি গাছের নিচের ছায়ায় কোনো সওয়ারি যদি ১০০ বছরও বাহন হাঁকায় তবুও তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। সেখানে শুধু সুখ আর শান্তি। কেউ কখনো সেখানে কোনো অভাব উপলদ্ধি করবে না।
আল্লাহপাক রব্বুল আলামিন কোরানের মধ্যে বলেছেন, ‘হে আমার বান্দাগণ আজকের দিনে তোমাদের কোনো ভয় নেই, তোমরা চিন্তিতও হবে না। যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা আজ্ঞাবহ ছিলে (আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি)। তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে জান্নাতের প্রবেশ কর। (সুরা যুখরুফ: আয়াত ৬৮-৭০)
সেখানে আরাম- আয়েশ, সুখ-শান্তি, আমোদ-প্রমোদ, চিত্ত বিনোদন ও আনন্দ-আহলাদের চরম ও পরম ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ভোগ-বিলাস ও পানাহারের আতিশয্য। জান্নাতীরা যা কামনা করবে কিংবা কোনো কিছু পাওয়ার আহবান জানাবে, সকল কিছু পাবে। সেখানে সবাই যুবক হয়ে বাস করবে। শরীরে কোনো রোগ-শোক, জরাজীর্ণতা, মন্দা, বার্ধক্য, দুর্বলতা ও অপারগতা থাকবে না। যত ধরনের ফল-ফলাদি, খাদ্য-খাবার, পানীয়, দুধ, মধু সুস্বাদু খাবার সব খেতে পারবে। ভোগ-বিলাসের সকল উপায়-উপকরণ বিদ্যমান। সেগুলো স্বাদ ও গন্ধে অপূর্ব। আমোদ-প্রমোদ, ভ্রমন-বিহার, খেলা-ধুলা, বেড়ানো, বাজার করা ও শুভেচ্ছা-স্বাগত জানাতে পারবে। প্রাচুর্যের কোনো অভাব হবে না। দ্রুতগামী যানবাহনসহ মনের ইচ্ছা চোখের নিমির্ষে পূরণ করতে পারবে।
জান্নতে তো সব কিছুই চাইলেই পাওয়া যায়, তবে সেখানে অভাব কিসের? হুম সেখানে একটা জিনিসের বড় অভাব রয়েছে। সারা জান্নাত তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যাবে না সেই জিনিসের অস্তিত্ব। আর সেটা হচ্ছে ‘অসুখ’। আমরা জানি সুখের বিপরিতেই হচ্ছে অসুখ, অশান্তি, রোগ, শোক ইত্যাদি। জান্নাতে শুধু সুখ আর সুখ। শান্তি আর শান্তি। সেখানে অসুখ আসবে কোত্থেকে!
আল্লাহপাক রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তারা সেখানে কখনও কোন দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হবে না এবং কোনোদিন সেখান থেকে তাদেরকে বের করে দেয়া হবে না।’ (সূরা হিজর: ৪৮)
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘(জান্নাতীগণ বলবে) তিনি আমাদেরকে নিজের অনুগ্রহে চিরন্তনী আবাস্থল দান করেছেন এবং আমাদের কোন দুঃখ এবং ক্লান্তি নেই।’ (সূরা ফাতির: ৩৫)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থঃ ‘যারা জান্নাতে যাবে তারা সর্বদা স্বচ্ছল অবস্থায় থাকবে, দারিদ্র ও অনাহারে কষ্ট পাবে না। তাদের পোশাক পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবনও কোনদিন শেষ হবে না।’ (মুসলিম: ২৮৩৬)
আসলে মানুষ দুনিয়াতে সামান্য সুখের আশায়, সামান্য সম্পদের জন্যে কত কিছু করে! কত পরিশ্রম করে সম্পদ উপার্জন করে কিন্তু একপর্যায়ে এসে সেটা সে আর ভোগ করতে পারে না। সেই সম্পদের পেছনে ছুটতে ছুটতে এক সময় তার ভোগ কারার সময় শেষ হয়ে যায়। অথচ দশটা পৃথিবীর সমান যে জান্নাতের কথা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেছেন সেটান জন্যে আমরা কতটুকু শ্রম দিচ্ছি? এটাই চিন্তা করার বিষয়।
আল্লাহপাক রব্বুল আলামিন আমাদেরকে তার দ্বীনের পথে পরিচালিত করে জান্নাত লাভের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।
0 comments: