চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টাকালে নিহত যুবকের আসল নাম মাহমুদ পলাশ (২৪)। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে। পলাশ চিত্রনায়িকা সিমলার স্বামী বলে জানিয়েছেন তার পরিবার।
সোমবার সকালে পলাশের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পলাশের নিহতের ঘটনার সংবাদে শত শত মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছে। পলাশের ছবি নিয়ে তার বাবা পিয়ার জাহান ও মা রীনা বেগম শোকে কাতর।
পলাশের বাড়িতে ১১টি ঘর। তারই একটিতে বসে কথা হয় বাবা পিয়ার জাহানের সঙ্গে। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পলাশ তার একমাত্র ছেলে। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে জান্নাত নামে চার বছরের আরেকটি মেয়ে আছে।
পিয়ার জাহান বলেন, ১৯৯০ সালে কাজের উদ্দেশ্যে তিনি ইরাক চলে যান। সেখানে চার বছর থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। পরে তিনি আবার সৌদি আরব চলে যান। ২০১২ সালে তিনি দেশে ফেরেন।
তিনি বলেন, এর মধ্যে ছেলে পলাশ মাহমুদ তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে পাস করে। দাখিল পাস করে সে সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে পড়া অবস্থায় সে ঢাকায় চলে যায়। তারপর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। শুনেছি পলাশ নাকি ঢাকায় চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছিল। তখন বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে বাড়িতে এলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশত না, কথা বলত না।
পিয়ার জাহান বলেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে চিত্রনায়িকা সিমলাকে নিয়ে রাতের বেলা বাড়িতে আসে পলাশ। মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা ও তার প্রেমিকা বলে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুই মাস পর আবার সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। বিয়ের কথা সিমলাও আমাদের কাছে স্বীকার করে। ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায়।
তিনি বলেন, আমরা সিমলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তাকে বলেছি আমার ছেলেকে যেন ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি অবাধ্য ছিল।
সর্বশেষ ২০-২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে বলেছে সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে।
সোনারগাঁ থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহতের ছবি রোববার রাত ১টার দিকে দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের বাড়িতে নিয়ে দেখালে তারা ছবিটি পলাশের বলে নিশ্চিত করে। তবে যতটুকু খবর নিয়েছি পলাশ নেশাগ্রস্ত ছিল। আর নেশার কারণেই বিমান ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য অপরাধ করেছে সে।
প্রসঙ্গত, রোববার বিকেলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দুবাইগামী বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি এক ‘অস্ত্রধারী’ যুবক ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। পরে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী ওই অস্ত্রধারীকে ধরতে কমান্ডো অভিযান পরিচালিত হয়। এরপর ছিনতাইকারীর নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে রুদ্ধশ্বাস এই অভিযান শেষ হয়। ফ্লাইটটিতে ১৩৪ জন যাত্রী ও ১৪ জন ক্রু ছিল। কাল পর্যন্ত জানা যাচ্ছিল ওই যুবকের নাম মাহাদী। তবে র্যাব আজ জানাল তার নাম পলাশ আহমেদ।
ওই বিমানের যাত্রীরা জানিয়েছেন, মাহাদী কোনো যাত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। বিমানের ভেতর সে একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে টানছিল।
তবে কী কারণে সে বিমান ছিনতাইয়ের অপচেষ্টা চালিয়েছিল তা এখনও ‘অস্পষ্ট’। কথিত ওই ছিনতাইকারী মাহাদী বিমানে দু-তিন রাউন্ড গুলির পর কোনো যাত্রীকে জিম্মি করেনি। সে ক্রুদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বারবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। তবে পাইলট ও ক্রুরা সুকৌশলে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করান।
0 comments: