Wednesday, July 26, 2017

অনলাইনে ইনকাম এবং ক্যারিয়ার গড়ার ৫টি শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি

SHARE

অনলাইনে ইনকাম এখনকার সময়ে অন্যতম আলোচিত টপিক। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা আর ফ্রিল্যান্সিং বিভিন্ন সাইটের আগমন অনলাইন ইনকামকে আকর্ষনীয় এবং সহজ করেছে।

অনলাইন ইনকাম বা ফ্রিল্যান্সিং এর প্রতি মানুষের আগ্রহের কারনে কিছু অসাধু মানুষ প্রতারণার মাধ্যমে আগ্রহীদের বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও অনেকেই সঠিক গাইডের অভাবে কিভাবে শুরু করতে হবে তা বুঝতে পারছে না। তাদের জন্যই এই আর্টিকেলে আমি অনলাইনে ইনকামের ৫ টি সহজ এবং সঠিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছি।

অনলাইনে ইনকামের অনেক ছোট-বড় উপায়ের মধ্যে আমি এমন ৫ টি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যে উপায়ে আপনি আপনার লং টাইম ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারবেন এবং পরিশ্রম করলে বাস্তবেই মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

এই আর্টিকেল সিরিজের পরবর্তী আর্টিকেলে আমি আপনাদের এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশী আয় করা মানুষদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো যেন আপনারা তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন।

আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।


গুগল অ্যাডসেন্স

গুগল অ্যাডসেন্স অনলাইনে ইনকাম করার অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত মাধ্যম। পৃথিবীর প্রায় সব ওয়েবসাইটই গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে আয় করে।

গুগল অ্যাডসেন্স হচ্ছে গুগলের অ্যাড প্রোগ্রাম। এটি ব্যবহার করে আপনি আপনার সাইটে বিভিন্ন অ্যাড প্রদর্শন করে উপার্জন করতে পারবেন।

আপনার সাইটে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাড করা থাকলে গুগল অটোমেটিক আপনার সাইটের ভিজিটরদের সামনে বিভিন্ন অ্যাড শো করবে এবং ভিজিটররা সেই অ্যাডে ক্লিক করলে আপনি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পাবেন।

এভাবে ১০০ ডলার বা তার বেশী হলে গুগল মাস শেষে আপনার ব্যাঙ্কে টাকা পাঠিয়ে দেবে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে কমিশন ভিত্তিক প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করার পদ্ধতি। আপনি অনলাইনে কোন কোম্পানীর প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে দিলে তারা আপনাকে একটা কমিশন দিবে। এটাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।

ধরুন আপনি amazon.com এর একটি প্রোডাক্ট রিভিউ লিখে আপনার সাইটে পোস্ট করে সেখানে ঐ প্রোডাক্টের লিঙ্ক দিলেন । অথবা ফেসবুকে সেই প্রোডাক্টের প্রশংসা করে সেই প্রোডাক্টের লিংক শেয়ার করলেন। এখন কেউ যদি আপনার লিঙ্কে গিয়ে সেই প্রোডাক্ট ক্রয় করে তাহলে amazon.com আপনাকে সেই প্রোডাক্টের প্রাইসের ৬% (এটা প্রোডাক্ট ভেদে বিভিন্ন হতে পারে) কমিশন হিসেবে প্রদান করবে।

কোন কোম্পানীর অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দিলে তারা আপনাকে তাদের প্রোডাক্টের একটা স্পেশাল লিঙ্ক দিবে। সেই লিঙ্কের মাধ্যমে কেউ তাদের সাইটে গিয়ে যদি প্রোডাক্টটি কিনে শুধুমাত্র তাহলেই আপনি কমিশন পাবেন।

যেমন ipage নামে একটা হোস্টিং সার্ভিসের জন্য আমার অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক হচ্ছে https://www.ipage.com/join/index.bml?AffID=659100
কেউ যদি এই লিঙ্কে গিয়ে তাদের হোস্টিং কিনে শুধুমাত্র তাহলেই তারা আমাকে কমিশন দিবে।

অ্যাফিলিয়েট কমিশন কোম্পানী এবং প্রোডাক্টভেদে বিভিন্ন হতে পারে। যেমন amazon.com এ প্রোডাক্টভেদে কমিশন ১-১০% হতে পারে।

আবার অনেক কোম্পানী প্রচারের জন্য প্রোডাক্টের প্রাইসের চেয়ে কমিশন বেশী দেয়। কয়েক বছর আগে এক হোস্টিং কোম্পানী ৩৬ ডলার মূল্যের হোস্টিং বিক্রির জন্য আমাকে ২০০ ডলার কমিশন দিয়েছিলো।

ইউটিউব

সাম্প্রতিক সময়ে ইউটিউবে চ্যানেল আর ভিডিও এর ছড়াছড়ির কারন একটিই। ইউটিউব এখন অনলাইনে আয় করার লোভনীয় একটি মাধ্যম।

বর্তমান সময়ে অন্যতম জনপ্রিয় সাইটের একটি হচ্ছে ইউটিউব। বর্তমানে এর ইউজার সংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ ইউটিউবে প্রায় ৫ বিলিয়ন ভিডিও দেখে।

ইউটিউবের এই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার প্রধান কারন হচ্ছে ইউটিউবে আয় করার সুযোগ। আয়ের সুযোগ থাকার কারনেই হাজার হাজার মানুষ নিয়মিত উচ্চমানের ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ছাড়ছে আর সেগুলো দেখার জন্যই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।

আয়ের মাধ্যম হিসেবে ইউটিউব এতই জনপ্রিয় যে অনেক শিল্পীরা তাদের মিউজিক ভিডিও, শর্টফিল্ম ইত্যাদি শুধুমাত্র ইউটিউবের জন্যই বানিয়ে থাকে। হাজার হাজার মানুষের এখন ইউটিউব ভিডিও বানানোই মূল পেশা হয়ে দাড়িয়েছে।

ইউটিউবে আয় করার প্রধান উপায় হচ্ছে বিজ্ঞাপন। আপনার ভিডিওতে ইউটিউব বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে। এর বিনিময়ে আপনি নির্দিষ্ট পরিমানে টাকা পাবেন। ১০০ ডলার বা তার চেয়ে বেশী হলে ইউটিউব আপনার ব্যাঙ্কে টাকা পাঠিয়ে দিবে।

তবে বিজ্ঞাপন ইউটিউব আয়ের প্রধান উৎস হলেও এটা কিন্তু একমাত্র উপায় না। বড় বড় ইউটিউবাররা স্পন্সরশীপের মাধ্যমে অ্যাডের চেয়েও কয়েকশতগুণ বেশী টাকা উপার্জন করে থাকে।

স্পন্সরশীপ হচ্ছে অনেকটা টিভি বিজ্ঞাপনের মতো। জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলের সাথে বিভিন্ন কোম্পানী চুক্তি করে ভিডিওতে তাদের পন্যের বিজ্ঞাপণের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা প্রদান করে।

অনেক কোম্পানী আছে ভিডিওতে তাদের প্রোডাক্ট প্রোমট করার জন্য ১০ হাজার ডলার বা তারও বেশী টাকা প্রদান করে।

ফ্রিল্যান্সিং

ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির অর্থ ব্যাপক হলেও আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং বলতে মূলত অনলাইনে বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করাকেই বোঝায়। বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশগুলোতে ফ্রিল্যান্সিং জাতীয় বৈদেশিক আয়ের একটি বড় অংশ দখল করে আছে।

এশিয়ার দেশগুলোর সস্তা শ্রমই ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের মূলস্তম্ভ। উন্নত দেশগুলোতে আইটি রিলেটেড কাজ যেমন ওয়েব ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, ডাটা এন্ট্রি, ডিজাইন ইত্যাদি কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে যে খরচ হবে তার অল্প কিছু অংশ ব্যয় করেই এশিয়ার দেশগুলো থেকে ফ্রিল্যান্সাদের দিয়ে একই মানের কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। একারনেই ফ্রিল্যান্সিং এর বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য খুব বেশি কিছুর দরকার নেই। ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ বা পিসি এবং ইংলিশে দক্ষতা থাকলেই এটি শুরু করা যায়। সাথে সংশ্লিষ্ট কাজের দক্ষতা থাকা আবশ্যক।

বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্স জবের মধ্যে ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং, ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ইত্যাদি কাজগুলোর ডিমান্ড এবং রেট বেশি। এগুলো শিখতে তুলনামূলক সময় বেশী লাগলেও আখেরে লাভ বেশী। তাই লং টার্মে কাজ করতে চাইলে এগুলোর একটা বেছে নেওয়া উচিত।

ফ্রিল্যান্সিং জবগুলো যেখানে পাওয়া যায় তাকে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস বলে। www.upwork.com সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস।

মার্কেটপ্লেসে রেজিস্ট্রেশন করার পরে আপনি সেখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জব পোস্ট দেখতে পাবেন। জবের বিস্তারিত ভালোভাবে পড়ে আপনি সেই জবের জন্য আবেদন করবেন। ক্লায়েন্ট আপনার আবেদন অনুমোদন করলে আপনি সে কাজ শেষ করলে ক্লায়েন্ট আপনাকে পেমেন্ট করবে। আপনি সেই টাকা মাস্টারকার্ড এর মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে তুলতে পারবেন।

ফাইভার (fiverr.com)

ফাইভার বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন আয়ের মাধ্যম। ফাইভার মূলত সার্ভিস মার্কেটপ্লেস। এখানে আপনি আপনার বিভিন্ন সার্ভিস যেমন ইমেজ এডিটিং, ভিডিও এডিটিং, আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি পোস্ট করতে পারবেন। কেউ আপনার সার্ভিস নিতে চাইলে আপনাকে পেমেন্ট করবে এবং আপনি তাকে সেই সার্ভিস প্রদান করবেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে ফাইভার এর প্রধান পার্থক্য হলো ফাইভার সার্ভিস ভিত্তিক এবং ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে জব ভিত্তিক।

অর্থ্যাত ফ্রিল্যান্সিং এ ক্লায়েন্ট জব পোস্ট করার পরেই আপনি অ্যাপ্লাই করতে পারবেন কিন্তু ফাইভারে আপনি আপনার সার্ভিস পোস্ট করার পরে ক্ল্যায়েন্ট সেই সার্ভিস কিনতে পারবে।

এর ফলে ফাইভারে নিজেকে এবং নিজের সার্ভিসগুলোকে নিজের মতো করে উপস্থাপন করা যায় যা ইনকামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

ফাইভারে যে কোন সার্ভিস ৫ ডলার দিয়ে শুরু হয়। তবে আপনি একই সার্ভিস বর্ধিত করে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন।

যেমন আপনি ৩০০ শব্দের আর্টিকেল লিখতে ৫ ডলার নেন। আপনি ৫০০ শব্দের জন্য ৮ ডলার নির্ধারন করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর মতোই আপনি ফাইভারের উপার্জন মাস্টারকার্ড দিয়ে এটিএম থেকে উত্তোলন করতে পারবেন।

SHARE

0 comments: