ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির ব্যাপক অর্থ থাকলেও আমাদের দেশে অনলাইনে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করে উপার্জন করাকেই ফ্রিল্যান্সিং বলে।
ফ্রিল্যান্সিং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। এটি উন্নয়নশীলদেশের সাধারন ছেলেমেয়েদেরকেও ভালো আয়ের মাধ্যমে উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ এনে দিয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে অনলাইনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে উপার্জন করার পদ্ধতি। আপনি ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী যে কোন কাজ করে দিবেন। কাজ শেষ হলে সেই কাজের টাকা বুঝে নিবেন। সিম্পল!!
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য যা প্রয়োজনঃ
- ইংলিশে দক্ষতাঃ যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং কাজের অধিকাংশ ক্লায়েন্টই বিদেশি। তাই সঠিকভাবে যোগাযোগের জন্য ভালো ইংলিশ জানা বাধ্যতামূলক।
- ইন্টারনেটসহ ল্যাপটপ বা পিসি
- কাজের দক্ষতাঃ আপনি যে ধরনের কাজ করতে চান, যেমন আর্টিকেল রাইটিং, ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি কাজের ভালো দক্ষতা প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং এ এখন অনেক প্রতিযোগীতা হওয়ায় ভালো দক্ষতার কোন বিকল্প নেই।
- ধৈর্য্যঃ যে কোন ভালো কাজের মতো ফ্রিল্যান্সিং এ সাফল্যের জন্যও ধৈর্য্য এর দরকার আছে। শুরুর দিকে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সময় লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা করে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
কি ধরনের কাজ আপনি করবেন?
ফ্রিল্যান্সিং কাজের অনেক ক্ষেত্র আছে। আপনি আপনার পছন্দ, দক্ষতা এবং সুযোগ অনুযায়ী আপনার কাজের ক্ষেত্র বেছে নিবেন। তাই আমি আপনাকে স্পেশাল কোন ক্ষেত্র সাজেস্ট করাটা ভুল হবে।
তারপরেও আপনার বোঝার জন্য বলি।
আপনি যদি ক্রিয়েটিভ মনের মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ডিজাইন টাইপের কাজ করতে পারেন। এটা হতে পারে লোগো ডিজাইন, বিজনেস কার্ড ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন, অ্যাড ডিজাইন ইত্যাদি।
আপনি যদি ইংলিশ লেখায় দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে রাইটিং টাইপের কাজ করতে পারেন। এটা হতে পারে আর্টিকেল রাইটিং, ব্লগ রাইটিং, ওয়েবসাইট কন্টেন্ট রাইটিং ইত্যাদি।
আপনি যদি প্রোগ্রামিং পছন্দ করেন তাহলে পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি কাজ করতে পারেন।
আপনি যদি মানুষের সাথে কমিউনিকেশন করতে ভালো পারেন তাহলে মার্কেটিং বা কাস্টোমার সার্ভিস টাইপের কাজ করতে পারেন।
আর আপনার যদি বিশেষ কোন যোগ্যতা না থাকে তাহলে ডাটা এন্ট্রি বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ টাইপের কাজ করতে পারেন। কিছু কাজের উদাহরণ হলো ইন্টারনেট থেকে খুঁজে খুঁজে কোন কিছুর লিস্ট করা, অডিও শুনে সেটা টাইপ করা, সোস্যাল মিডিয়ায় কোন কিছু পোস্ট করা ইত্যাদি।
কিন্তু কোন কাজের চাহিদা এবং রেট বেশী?
এতক্ষনে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে এই প্রশ্ন জেগেছে। কোন কাজের চাহিদা এবং রেট বেশী সেটা আপনি নিজেই খুঁজে নিতে পারবেন।
প্রথমে https://www.upwork.com/o/jobs/browse/ লিঙ্কে যান।
বামে দেখবেন জব ক্যাটাগরি আছে।
জব ক্যাটাগরি সিলেক্ট করলে নিচে সাব-ক্যাটাগরি দেখাবে।
বিভিন্ন ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে সেখানে ১ দিনে কতোগুলো জব পোস্ট হয় দেখুন।
জবগুলোর বাজেট কিরকম দেখুন।
প্রত্যেক জবে কতোজন Proposal সাবমিট করে দেখুন।
তাহলেই আপনি আইডিয়া পাবেন আপনার পছন্দের ক্যাটাগরিতে কাজের চাহিদা, রেট এবং প্রতিযোগীতা কেমন।
মনে রাখবেন, উপরের লিঙ্কে অর্থ্যাত আপওয়ার্ক এ ২ ধরনের জব আছে। Fixed Price এবং Hourly।
Fixed Price এ কাজের বাজেট ক্লায়েন্ট আগেই উল্লেখ করে দেয়।
কিন্তু Hourly বা ঘন্টায় চুক্তির কাজে আপনি প্রতি ঘন্টা কাজের জন্য কতো নিবেন এবং সর্বোচ্চ কতো ঘন্টার মধ্যে কাজটি করতে পারবেন সেটা প্রোপোজাল এ উল্লেখ করে দিবেন।
কাজ শেষ হলে ঘন্টা হিসেবে আপনি টাকা পাবেন।
একারনেই ঘন্টা চুক্তির জবগুলোতে আপনি বাজেট দেখতে পাবেন না।
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য আপনাকে নিচের ধাপগুলো অনুসরন করতে হবে।
ধাপ-১
=====
প্রথমে কোন ক্যাটাগরির কাজ করতে চান সেইটা ঠিক করুন। কাজের চাহিদা, রেট ইত্যাদি জানার জন্য উপরেল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরন করুন।
ধাপ-২
=====
নিজেকে সেই কাজের জন্য প্রস্তুত করুন। ইন্টারনেট ঘেটে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে কাজ ভালোভাবে শিখে নিন।
পরিচিত কেউ সে ব্যাপারে এক্সপার্ট হলে তার সাহায্য নিন।
ফ্রিল্যান্সিং এ এখন অনেক প্রতিযোগীতা হওয়ায় ভালোভাবে দক্ষ হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
ধাপ-৩
=====
আপনার কাজের একটি পোর্টফোলিও তৈরি করুন।
আপনি ডিজাইনার হলে বেশ কিছু সুন্দর ডিজাইন করে একটি ফ্রি ব্লগ তৈরি করে সেখানে আপ্লোড করুন।
রাইটার হলে কয়েকটি ভালোমানের আর্টিকেল লিখে পোস্ট করুন।
মোটকথা আপনার কাজের কিছু নমুনা ক্লায়েন্টকে দেখানোর জন্য প্রস্তুত করুন।
কারন আপনার যতোই দক্ষতা থাকুক না কেন, আপনি আপনার কাজের উদাহরণ না দেখালে কেউ বুঝবে না।
ভালো একটি পোর্টফোলিও আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুনে বাড়িয়ে দিবে।
ধাপ-৪
====
যে কোন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হচ্ছে ওয়েবসাইট যেখানে ক্লায়েন্টরা জব পোস্ট করে।
সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হচ্ছে https://www.upwork.com
এখানে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পরে প্রোফাইলে সব তথ্য ঠিকভাবে পূরন করুন। কোন তথ্যই ফাঁকা রাখবেন না।
আপনার প্রোফাইলে সব তথ্য দিয়ে সেটাকে আকর্ষনীয় এবং বিশ্বাসযোগ্য করলে ক্লায়েন্টরা আপনাকে সহজে ট্রাস্ট করবে।
তবে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত কোন কিছু দিবেন না।
অনলাইনে বিশ্বাস হচ্ছে সব কিছুর মূল্ভিত্তি। আপনার অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা তথ্যের কারনে ট্রাস্ট হারালে সেটা ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
ধাপ-৫
====
এবার আপনার পছন্দের ক্যাটাগরি ঘুরে ঘুরে আপনার পছন্দের জব খুঁজে বের করুন এবং প্রপোজাল সাবমিট করুন।
প্রথমদিকে টাকার পরিমান না চিন্তা করে কাজ এবং রেটিং কে গুরুত্ব দিন।
প্রয়োজনে একটা কাজ ক্লায়েন্টের বাজেটের অর্ধেক টাকায় করে দেওয়ার প্রস্তাব দিন।
কাজ ভালোভাবে শেষ করলে ক্লায়েন্ট আপনাকে ভালো রেটিং দিবে। এইটা আপনার ক্যারিয়ারে অনেক ইম্পরট্যান্ট একটা জিনিস।
আপনার প্রোফাইলে শেষ করা প্রোজেক্টের সংখ্যা বাড়লে এবং ভালো রেটিং থাকলে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
বোনাস ধাপ
========
আপনার পরিচিত কেউ যদি Upwork এ কাজ করে তাহলে তাকে অনুরোধ করে তার কাছ থেকে একটি অল্প বাজেটের কাজ নিন।
কাজ শেষ করে সে রেটিং দিলে আপনার প্রোফাইলে একটা কমপ্লিট প্রোজেক্ট এবং রেটিং যোগ হবে।
এটা আপনাকে পরবর্তী প্রোজেক্ট পেতে সাহায্য করবে।
কিভাবে টাকা হাতে পাবেন?
ফ্রিল্যান্সিং এর ইনকাম হাতে পাওয়া খুব সহজ। Upwork এর সাথে জনপ্রিয় পেমেন্ট সার্ভিস Payoneer এর পার্টনারশীপ আছে।
Payoneer আপনাকে একটা মাস্টারকার্ড পাঠাবে যেটা দিয়ে আপনি সহজেই এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
তাহলে আর দেরি কেন? শুরু করে দিন ফ্রিল্যান্সিং :)
0 comments: