Friday, June 7, 2019

প্রতিদিন আমারে ফোন দিবা.ঠিক মত খাবা.আর...

SHARE

- প্রতিদিন আমারে ফোন দিবা...ঠিক
মত খাবা...আর
শহরের যে সুন্দর সুন্দর মাইয়ারা আছে
ওদের
দেইখা আমারে একদম ভুইলা যাইবা না
কও?
- তোমারে কেমনে ভুলব? নিজের
থেইকা বড়
বেশি ভালবাসি তোমারে।
- আমি শুনছি সব পোলারা এমনে কথা
কয়।কিন্তু ওরা
কথা রাখে না।তুমি কিন্তু ওদের মত
না।কথা রাখবা
কিন্তু....
এতটুকুর পর আর কথা বের হল না শশীর।
কান্নায়
ভেঙে পড়ল।আজ তার প্রহর চলে যাচ্ছে
তাকে
ছেড়ে।বাসও এসে গেছে।এক হাতে
ওড়না
দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে।
- এবার যাইতে দাও।সময় হয়ে গেছে।আর
এমনে
যদি কান্দো আমি যাইতে পারব না...
- আচ্ছা যাও...
আর শোন...এইডা নিয়ে যাও।
- কি এইডা?
- এর ভেতর কিছু টাকা আছে।আব্বাজান
স্কুলে
যাওয়ার সময় দিত আগে।সেইডা এক
মাটির ব্যাংকে
জমাইছিলাম।আইজ ভাংছি তোমার
লাইগা।
- এইডা কেন করলা শশী? আমি তো
কিছুই দিতে
পারিনাই তোমারে।
- কে কইছে কিছুই দাও না।এই যে
আমারে এত
ভালবাস আমারে।এর থেইকা বেশি
কিচ্ছু চাইনা আমি।
এবার ছেলেটা নিজের অজান্তেই
কেঁদে
ফেললো। শশীর হাত ধরে বলল...
- আজীবন আমার পাশে থাকবা এমনে
কইরা।
গেলাম.....
কিছুক্ষণ পর বাস থেকে আবার নেমে এল
ছেলেটি।মেয়েটি তখনো মূর্তির মত
দাড়িয়ে
রয়েছে।
- কি হইছে নামলে কেন?
- একটা কথা কইতাম....
- কি কও?
- তোমারে যে একটা কবুতরের বাচ্চা
দিছিলাম না?
ওইটার কিন্তু খুব যত্ন নিবা।ওর মা টা
মইরা গেছে আমার
মা মরনের কয়দিন পরেই।আমিই ওর সব
ছিলাম এতদিন।
আজ আমিও চইলা যাচ্ছি.....
- তুমি এত চিন্তা কেন করতেছ? আমি
আছি না? তুমি
যতদিন না আইবা,আমি মনে করব ওই
আমার প্রহর.......
;
ব্যস্ততম শহরে প্রথম দিন পা রেখেই
মায়ের
রেখে যাওয়া ফোনটা হারাতে হল
প্রহরকে।যার
সাথে শেষ হল শশীর সাথে
যোগাযোগের
এক মাত্র মাধ্যম।অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে
খুজে
পেতে হল তার ক্যাম্পাস হোস্টেল।
এখানে
কেউ কারো সহযোগীতা করার জন্য
বসে
থাকে না।এখানে কেউ শশী নয়।কয়েক
মাস
কিভাবে যেন কেটে গেল।টাকা যা
ছিল সেটা
শেষ।রুমমেট এর থেকে ধার দেনা করে
চলল
আরো কিছুদিন।কিন্তু ক দিন বা
এভাবে? ওদের
কাছে এখন ধার চাইতেও লজ্জা বোধ হয়
তার।হঠাৎ
শশীর দেয়া পুটলি টার কথা মনে পড়ে
গেল
প্রহরের।ওটা ব্যাগ থেকে বের করে
দেখল
কয়েক টা একশ টাকা,পঞ্চাশ, বিশ,দশ.....
মেয়েটাকে খুব বেশি মনে পড়ল তার।
কত দিন
গেল কথাও হল না।অথচ কলেজ ফাকি
দিয়ে বিলের
ভেতর এক সাথে কত পথ চলা তাদের.....
এসব ভেবে কখন যে কেঁদে ফেললো.....
একটু পরেই এক রুমমেট এসে টাকা
চাইলো।
ধারের টাকা, চাইবে এটাই
স্বাভাবিক। হাতের টাকা গুলার
দিকে চেয়ে রইলো প্রহর।খুব মায়া
লাগছে
কাউকে দিতে মন চাইছে না তার।এটা
যে তার শশী
একটু একটু করে জমিয়েছে.......
অবশেষে দেনা মুক্ত হল প্রহর।কিন্তু শশীর
শেষ সম্পদ টুকু আর থাকলো না।
;
এভাবে সাগরে ভাসার চেয়ে নিজ
গ্রামে গিয়ে
জমিতে হাল ধরা আর শশীর হাতের
মাখা ভাতেই সুখ
মনে হল প্রহরের কাছে।পড়ালেখা কি
সবার জন্য
হয় নাকি? যার মা বাবা কেউ নেই
তার আবার কিসের
পড়ালেখা।কিছু টাকা হলে গ্রামে
চলে যাবে স্থির
করল প্রহর।কিন্তু এই কটা টাকাই বা কে
দেবে
তাকে! বন্ধুদের অনেক কেই বলল। কিন্তু
অতটা
কাছের বন্ধু কেউ নেই তার।শহুরে
কালচারের
সাথে ঠিক মিশতে পারেনি
ছেলেটা।আর তাই আজ
কেউ নেই তার পাশে।রাতের বেলা
বের হয়ে
গেল ব্যাগ ঘাড়ে করে।বাসে চড়ার
টাকা নেই ঠিকিই,
তবে বাসের ছাদে চড়ার মত শক্তি তো
আছে!চুরি
করে বাসের ছাদে চড়ে বসলো প্রহর।
কিন্তু
ছাদে সে একা না।বেশ কয়েকজন
শ্রমিক আছে
উপরে।ঝুড়ি,কোদাল,এসব দেখে বোঝা
যায় এরা
কোথাও কাজের জন্য যাচ্ছে।নিজের
কাপড়ের
দিকে তাকিয়ে দেখে কাপড় গুলা
ওদের মত না
হলেও খুব ভাল না।ওদের মাঝে
নিজেকে সপে
দিল।এভাবে লুকোচুরি করে ভোরে
নিজ গায়ে
পৌঁছে গেল প্রহর।
প্রচন্ড খুদায় পেট চো চো করছে।গত
দুপুরে
খাওয়া হইছিল।সব কিছু আগের মতই আছে।
নয় মাসে
কি বা আর বদলাবে? শশীর কথা মনে
হতেই ক্ষুদা
ভুলে গেল প্রহর।ছুটলো শশীর সাথে
দেখা
করতে.....
শশীর বাড়িটা ফাকা পড়ে আছে, কেউ
নেই
বাড়িতে।ডাকাডাকি করেও কেউ এল
না।দরজা ঠেলে
ভেতরে দেখে বিছানায় পড়ে আছে
শশীর বড়
বোন।কথা বলতে পারছেনা।চোখ
মেলে
দেখছে সব।প্যারালাইজড......
স্তব্ধীভূত হয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো
প্রহর।
বাড়ির পেছন থেকে ক্রাচে ভর করে
এগিয়ে
এল শশীর মা।বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে
ছেলেটা।এই
ক দিনে এত কিছু কিভাবে হয়ে গেল!
- চাচী কি হইছে এসব কি?
- বাপ তুই না পড়তে গেছি শহরে? আইলি
কবে?
- আমার কথা বাদ দাও।আমি কি
দেখতাছি এসব?
একটু তাচ্ছিল্ল্যের হাসি দিয়ে
বললো।...
- আল্লাই কপালে যা লিখছে তাই
হইছে বাজান।কি আর
কই তোরে।বয় তর লাইগা মুড়ি
আনি,খায়া যাইস....
- লাগব না চাচী। শশি কই?
- মায়া ডা ওহনো আয়নাই মনে হয়...
- মানে কই গেছে ও ?
- কিছু কওনের ভাষা নাই বাপ।মাইয়ার
লগে খুব বড়
অন্যায় করছি রে...
- কি করছ কইবা তো?
হু হু করে কেঁদে উঠলো মহিলা।কন্ঠস্বর
কেঁপে যাচ্ছে কথার তালে।
- চাচী কান্দো কেন? কি হইছে কও
আমারে.....
মহিলার অবস্থা আর চোখ দেখে
নিজেকে শক্ত
করার চেষ্টা করছে প্রহর।খারাপ কিছু
হয়েছে
সেটা বোঝার বাকি নেই।ঘামতে শুরু
করেছে
ছেলেটা।
- চাচী চুপ কইরা আছো কেন??? কও না.....
- শশীর বাপে ওর বিয়া দিছিলো জোর
কইরা।মাইয়া
আমার বিয়া করতে চাই নাই।শুধু চোখ
ভিজাইত।কেউ
ওর কথা শুনি নাই...
দু দাতের মাঝে ঠোট নিস্পেশিত
হচ্ছিল প্রহরের।
কথা গুলা কেমন হাওয়ায় ভাসছে।কান
গুলা কিছু শুনতে
চাচ্ছে না।মস্তিষ্ক যেন কিছু বুঝতে
চাইনা।
- চাচী কি কইতাছ এসব?
- পোড়া কপালি মাইয়া আমার।
কপালে সুখ জুটলো না।
জামাই যৌতুক যৌতুক করে যা ছিল সব
নিছে।তিন মাসের
মাথায় মাইয়া বাড়ি দিয়া গেছে.....
উদ্ভ্রান্তের মত ফিরে চলল ছেলেটা।
আস্তিত্ব
বলে কিছু খুজে পাচ্ছে না সে।সব কিছুই
শুন্য তার।
এক মাত্র আপন বলতে যে ছিল সেও পর
এখন!
নিজের বাড়িটা ফাকা পড়ে আছে।
নোংরা পরিবেশের
কারখানা সেটা এখন।মালিকের
অনুপস্থিতি তার কারণ।
দরজার সামনে পায়রার খাচাটা ঝুলে
আছে এখনো।
টিনের চাল কয়েক জাইগা ফুটা হয়ে
আছে।ময়লার
ভেতরেই ব্যাগ রেখে বসে পড়লো
পাশে...
সন্ধ্যা হয়েছে অনেক আগেই।চারদিক
আধার
নেমে আসার পায়তারা।এদের সাথে
পাল্লা দিতেই
যেন এক ফালি চাঁদ হেসে উঠল
পূর্বাকাশে।ঝিঝি
পোকার কান ঝালা পালা আওয়াজ।
বারান্দার এক
জাইগাতেই বসে আছে প্রহর।নেই কোন
ব্যস্ততা।চারিদিক শুন্য তার।পেপাসায়
গলা শুকিয়ে কাঠ।
উঠানের কলে অনেক চেষ্টা করেও
পানি তোলা
গেল না।ক্ষুদা আবার নেড়েচেড়ে বসল
যেন...
চেনা রাস্তাটা আজ বড্ড অচেনা
লাগছে তার।মনে
হচ্ছে কত দুর পথ শশীর বাড়ির।হ্যাঁ আবার
এসেছে....
বারান্দায় হারিকেনের আলো
টিপটিপ করে
জ্বলছে।একটা নারী মূর্তি বসে আছে
সামনে
গিয়ে দাড়িয়েছে প্রহর।হঠাৎ কারো
উপস্থিতিতেও
বিন্দু মাত্র বিচলিত হল না শশী। যেন
তার জান্যই
অপেক্ষা করছিল সে।
চোখের দিকে তাকিয়ে আছে দুজনেই।
একটু
কেপে উঠলো শশী।বিন্দু বিন্দু ঘাম
জমেছে
প্রহরের।
খুব দুর থেকে বলা হলে যেমন লাগে
তেমনই
শোনা গেল শশীর প্রশ্ন টা...
- ভাল আছ প্রহর?
- আমার কোন দোষ ছিল না....(প্রথম
দিনের
ফোন হারানো থেকে সব বলল প্রহর।)
চুপ আছ কেন শশী? কিছু কও?
- কওনের সব শেষ। চইলা যাও।আর আইসো
না...
- আমার পায়রা টারে দেখিনা।কই
রাখছো?
- বিয়ার দিন ওরে মুক্তি দিছি সেই
সাথে তোমারেও।
- অচেনা শহর আমারে ঠাই দেই নাই।
তুমিও আমারে
ফালাই দিবা?
- তোমারে দেওয়ার কিছুই নাই
আমার.....
- কিছু নাই? তাইলে আমার জন্য কান্দো
কেন? এই
যে চোখের পানি ঝরতেছে এইডা কি?
- এইডা অবুঝ তো তাই ঝরতাছে।তুমি
যাও...! ভুইলা যাও
পারলে.....
অন্ধকার পথে ফিরে চলল ছেলেটা।
হাত দিয়ে
বারবার চোখ মুচছে।জানে পিছে কেউ
আসবে
না আজ।তবুও কিসের আশায় বারবার
পিছু ফিরে
দেখে সে।
মাঝ পথে আবার দাড়িয়ে পড়ল।ঘুরে
চলল আবার....
মেয়েটা এখনো সেখানেই বসে আছে।
উঠানের এ প্রান্ত থেকে বোঝা যায়
মাথা নিচু করে
কাঁদছে সে।
- শশী?
- হু...আবার কি?
- না না ভালবাসি কইতে আসি নাই।
- কি কইবা?
চোখের পানি দু হাত দিয়ে ভাল করে
মুছে
নিয়েছে।হাসি হাসি মুখ করে বলল...
- কিছু খাইতে দিবা? বড্ড খিদা
পাইছে।কাল দুপুরে
খাইছিলাম.....
শশী খুব ভাল করেই জানে চেহারার এই
ভাব টা
প্রহরের কৃত্তিমতা।তবে যেটা বলছে
সেটা সত্য।
মায়ের কাছে প্রহর এসেছে খবর শুনে
তাকে
একনজর দেখার জন্য অস্থির হয়ে ছিল
সে।কিন্তু
আর জন যে দেহ নিয়ে খেলা করছে
তার
প্রহরের কাছে কিভাবে যাবে সে
দেহ নিয়ে।
বারবার এটাই ভেবেছে।অন্যের বাড়ি
কাজ করে মা
বোন কে দেখতে হয় তার।কিভাবে সে
এত কিছু
চিন্তা করবে ? একটা এক্সিডেন্ট সব
শেষ করে
দিয়ে গেল।বাপটাকে নিয়ে গেল
চীরতরে,মা
আর বোন হারিয়েছে স্বাভাবিক
জীবন।
নিজের জন্য রাখা খাবারটা নিয়ে
এল প্রহরের জন্য।
বারান্দায় বসে খাবারে হাত
বাড়িয়েছে প্রহর।কি মনে
করে থেমে গেল আবার।
- এক দিন টিফিন পালায় আমার জন্য
খাবার নিয়ে
আইছিলা,নিজ হাতে আমারে
খাওয়ায় দিছো।আজ
একবার দিবা শশী? আর কোন দিন
চাইতে আসব
না.....
একটু শব্দ করেই কেঁদে উঠলো মেয়েটা।
সাথে সাথে মুখ চাপা দিল।কিছুক্ষন পর
হাত ধুয়ে ভাত
মেখে প্রহরের মুখের সামনে ধরল।
একবার,দু
বার.....
এরপর পানি খেয়ে উঠে পড়ল।খাওয়ার
সময় কিভাবে
কান্না করবে।গলা চোখ এমনিতেই
ব্যাথা করছে।
ভাত যেন নিচে নামে না....
প্রহর চলে যেতে আনমনে বলে উঠলো
শশী সেদিন আমার সাথে তুমিও
আমারে খাইয়ে
দিছিলা প্রহর.....
;
দু দিন পর...
কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়ল
প্রহর।
আকাশে মেঘের ভেলার অবাধ বিচরণ।
সেই সাথে
দমকা বাতাস। চোখেমুখে পানি
ছিটিয়ে বেরিয়ে
পড়েছে।কাঁধে চাপা একটা ব্যাগ।
কাপড়চোপড় ছাড়া
তেমন কিছুই নেই।উঠানের মাঝে
দাড়িয়ে দেখে
নিয়েছে বাড়িটা আর একবার।বুকের
ভেতর টা হুহু
করে উঠছে।কিছুক্ষন পরেই চলে এল
গন্তব্যে.....
ব্যাগের ভেতর থেকে একটা কাগজের
প্যাকেট
বের করে রেখে দিল দরজার সামনে।সব
কাজ
শেষ। এবার মুক্ত মনে চললো অজানার
উদ্দেশ্যে।
;
চারদিকে পাখির কলরবে জেগে
উঠেছে সকাল।
জেগেছে শশী....
কাজের সময় হয়েছে।বেরিয়ে পড়তে
হবে
এখনি।দরজায় প্যাকেট টা দেখে কিছু
সময় থমকে
রইলো শশী।কিছুক্ষন ভেবে খুলে
ফেললো
প্যাকেট টা।প্রথমেই চার ভাজ করা
একটা চিঠি বের
হল সেখান থেকে...
প্রিয় শশী...
সম্বোধন কি দিয়া করা উচিৎ
জানিনা।প্রিয় কইলাম এই
জন্য যে এখনো তোমারে প্রিয় মানুষই
ভাবি।বুক
ভরা আশা নিয়ে আইছিলাম তোমার
কাছে।অচেনা
শহর আমারে জাইগা দেয় নাই।
ভাবছিলাম গ্রামেই
তোমার সাথে একটা ছোট্ট সংসার
করি,হইলো না
তা...।
এই দুইটা দিন আমি কেমনে থাকছি
কইতে পারব না।
বুকের ভেতর টা একদিন যদি দেখাইতে
পারতাম
তোমারে ! চোখের সামনে তোমার
কষ্টটা ও
দেখতে পারিনা।তাই ঠিক করছি ওই
অচেনা শহরের
কাছেই নিজেরে বিলাই দিই।মা
বাপে যে জমিটুকু
আমার জন্য রাইখা গেছিলো সেইডা
বেচতে
গেছিলাম।মন তাতে সাড়া দিল না।
তোমার নামে
লেইখা দিলাম। প্যাকেটের ভিতর
দলিল আছে।আশা
ছিল তোমারে নিয়া থাকি ওইখানে।
সবার আশা তো
আর পুরন হয়না।তাই আমার শুন্য বাড়িতে
তোমারে
নিমন্ত্রণ করলাম।তোমারে লিখলে
সারা রাতেও
শেষ করতে পারব না।অনেক কিছুই কইতে
মন চাই।
কিন্তু চোখের পানি আমার কথা
শোনে না।তাই
একটা কথাই কইতে চাই আর।ভাল
থাকবা...
তোমার প্রহর...
বারান্দার খুঁটিটা ধরে বসে পড়লো
শশী।মাথা ভার
হয়ে আসছে তার।মুখটা দু হাতের তালুর
ভেতএ
ডুবে গেছে।কি হচ্ছে এসব।এমন টা
চাইনি সে.....
টিপটিপ করে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ধীরে
ধীরে
প্রচন্ড জলধারা নামতে শুরু করছে আকাশ
থেকে।
গ্রাম থেকে বের হওয়ার পথটা শেষ
হয়েছে
নাদীর ঘাটে।এই ভোরে কোন মাঝি
এখনো
আসেনি।মাঝে মধ্যে দু একজন থাকলেও
আজ
প্রতিকুল আবহাওয়ায় নেই কেউ।বিশাল
বটবৃক্ষের
নিচে বসে রইলো প্রহর।বৃষ্টির পানি
ধুয়ে নিয়ে
যাচ্ছে চোখ থেকে নামা ছোট্ট ঝরনা
ধারা।
বাতাসের প্রকোপ আরো বাড়তে
থাকলো।এ
যেন চলবে, আর চলতে থাকবে।দুপুর
প্রায়....
কমে এসেছে বাতাসের গতি।দুএকজন
এবার
চোখে পড়ছে।ঘাটের দিকে এগিয়ে
যাচ্ছে মতি
কাকা।
- কাকা ওইপারে যাবা?
- হ যাব।তয় দেরি কর আর দু একজন হইলে
নিয়ে
যাই।
- এই ঝড় বাদলে কারে নিবা আর!
- একটু দেহি কেউ আসে কি না! তোর
তো ঠান্ডা
লাগবে। জামা কাপড় ভিজা দেহি...
- কিছু হইব না।তুমি নৌকা ঠিক কর। যে
বাতাস হইলো
জঞ্জালে দেখ ভইরা গেছে...
মতি কাকা নৌকার দিকে পা
বাড়িয়ে চললো।মতি কাকার
পিছু নেয়ার জন্য উঠে দাড়িয়েছে
প্রহর।পেছনে
পদশব্দে ঘুরে তাকালো ছেলেটা।
মূর্তির মত
কতক্ষন তাকিয়ে থাকলো সে।
- কই যাচ্ছো?
- তুমি এদিকে কই যাবা?
- আমি আগে জানবার চাইছি প্রহর কই
যাও?
গলার আওয়াজ প্রথমের চেয়ে কিছুটা
বেড়ে
গেছে শশীর।
- সঠিক উত্তর জানা নেই।তবে
যেখানেই যাব ভাল
থাকব।
- কেমনে কইতেছ ভাল থাকবা?
- গ্রামের মানুষগুলার কষ্ট দেখতে হইব
না তাই...
- গ্রামের মানুষগুলার তখন আরো বেশি
কষ্ট হইব
তুমি গেলে।
- এক সময় আবার ভুলে যাবা।তখন ঠিক
হয়ে যাবে...
- কোথাও যাবা না তুমি....
> এ প্রহর নৌকা ছাড়ব,আইসা পড়...
প্রহর কিছু বলার আগে শশী বলে উঠলো...
- ও যাবে না কাকা তুমি যাও...
- না কাকা থাম আইতেছি আমি....
তখনি হাত আকড়ে ধরলো শশী।
- একবার হারায়ছি তোমারে।আর
হারাইতে চাই না
প্রহর।বড্ড ভালবাসি যে তোমারে।
মুহুর্তেই বিগলিত হয়ে গেল প্রহর।ওই
চোখের
পানি দেখার মত সহ্য বা ক্ষমতা
কোনটাই তার নেই।
ফিরে পাওয়ার আনন্দ ভাগাভাগি
করে নিয়েছে দুজন।
প্রহরের দু বাহুর মাঝে নিজেকে শপে
দিল
শশী। কিছুক্ষন পরেই সাড়া দিল প্রহর।
শশীর
নিমন্ত্রণ গ্রহন করে জড়িয়ে নিল
তাকে......
ফিরে চলল আবার গ্রামের পথে।
টিপটিপ বৃষ্টিতে দুজন দুজনের হাত ধরে হেটে চলেছে
নতুন জীবনের পথে।

SHARE

0 comments: